“অন্ধাস্তিত্ব”
সবে আর পনের কি বিশ সেকেন্ড আছে হাতে নিজের জীবনের জন্য। বাম পা’টা বাড়িয়েই এগুনো শুরু করলো তিথি। সময়টা ঠিক সন্ধ্যা। আকাশের গোল জিনিসটাকে ‘চাঁদ’ নামের কিছু মনে না হলেও পরক্ষণেই ও বুঝতে পারলো সেটা পূর্ণিমা। আলোতে অন্ধকারের ঘনত্ব ক্রমশ বেড়ে উঠছিল যা বোধ হয় “রো”- কেও হার মানিয়েছিল। হয়ত কিছুক্ষণ পরই তিথি থাকবে না, আবার থাকতেও পারে। ওর ইচ্ছে করছিল চাঁদের আলোটাকে টুপ করে নিভিয়ে দিতে। চাচ্ছিল না সেখানে ও আর পাহাড়টা ছাড়া আর কেউ থাকুক।
শরীরটাকে ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো তিথি। এক পা, দু পা করে পাহাড়ের ধারে এগিয়ে যেতে থাকলো। ঠিক যেভাবে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল জীবনের প্রত্যেকটি সফলতার দিকে। কিন্তু এ যে অন্যরকম সফলতা। মৃত্যুকে ও চ্যালেঞ্জ করেছিল, মৃত্যু ওকে গ্রহণ করুক আর নাই করুক ও মৃত্যুর আঁচল ছাড়বে না। পাহারের ধারে দশ সেকেন্ডের মধ্যে পৌছেও গেলো ও। ত্রিশ তলা সমান পাহাড়টা থেকে নিচে তাকিয়ে একটুও মাথা ঘোরালো না, পা’টা কাঁপল না। কী করবে ও এখন?! “গুডবাই আর্থ” বলে চিৎকার দেবে!! কিন্তু এই নাটকীয়তাটা কি না করলেই চলছিল না! একটু পরেই যা হতে চলেছে সেটাই তো তিথির জীবনের সবচেয়ে বড় নাটক, যার কাছে সমস্ত এ্যাকটিং ফিকে পরে যায়।
আর এক পা বাড়ালেই অভিকর্ষের টান পড়বে। ভূমি ওকে নিজের সঙ্গে আলিঙ্গন করতে চাইবে। কিন্তু নাহ, এটা সুইসাইড না।
বাঞ্জি জাম্প, জীবনের সবচেয়ে নাটকীয় ভ্রমণ; যেখানে তিথি ওর সব না পারাগুলোকে জয় করবে। যেখানে তিথি একটা বাঞ্জি জাম্প করার আগে ইমোশনালী কথাগুলো ভেবে পা বাড়াচ্ছে, সেখানে হয়ত কিছু মেয়ে জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণায় সুইসাইড করার আগে এই কথাগুলোই ভাববে। সেই মেয়েটা হয়তো অন্যের থেকে হাজার গুণে ব্রিলিয়্যান্ট। সফলতার চূড়ান্ত সীমায় পৌছানোর ঠিক আগ মুহূর্তে যখন একটা মেয়ে দেখতে পায় যে, সে মেয়ে হয়ে ব্রিলিয়্যান্ট বলে তার ছেলে ক্লাসমেটকে এই নিয়ে তিরস্কার করা হচ্ছে তখন তার সফলতার পেছনে হাজারটা সাপোর্ট থাকা সত্ত্বেও মনের একটা যায়গা ভেঙে যায়। পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে প্রচুর পরিমাণে হরমোন নিঃসরিত হয়, জীবণকে খুবই গুরুত্বহীন বলে মনে হয়। তবে কি এই কথাটা শোনার জন্যই বেঁচে থাকা, এত পরিশ্রম, এত জানা!
পনের জনের মধ্যে দশ জন ছেলের পাঁচ জন মেয়ের প্রতি এক্সট্রা রেসপেক্ট পারতপক্ষে দেখতে ভালো হলেও তা কি আদৌ অপমানের নয়! এর মানে কি এই নয় যে, মেয়েরা দুর্বল বলে তাদেরকে আলাদাভাবে রেসপেক্ট করার আইন জারী করে দেওয়া হয়েছে! কই, কোন মেয়ের জন্য তো এমন কোন রুল তৈরি হয়নি যে যানবাহনে কোন পুরুষ সহযাত্রী দাঁড়িয়ে যাত্রা করলে তাকে উঠে বসতে দিতে হবে। তবে মানবিকতার ব্যাপারটা আলাদা। অনেকে মানবিকতার ধারও ধারে না। লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কিংবা নিজের ইমেজ লেভেল বাড়াতে নিজের সিট ছেড়ে দেয় এরা।
নিম্নবিত্ত পরিবারে অনেক কষ্ট করে ডাক্তারি পড়া মেয়েটিকে যখন বলা হয়, “ছুড়ি, কাঁচি দিয়ে মানুষের চামড়া কেটে আর কি হবে?? বিয়ের পর স্বামীর সেবাই তো তোমার আসল কাজ”, তখন কি তার সব চেষ্টা বিফলে যায় না!!
তবে মেয়েরা, তোমাদের দৃষ্টিটাকে খোল। নিজেকে জান, নিজেকে জানো, নিজেকে শেখো। অন্ধত্বকে পেছনে মাড়িয়ে বাঞ্জি জাম্প দিয়ে প্রমাণ করে দাও নিজের অস্তিত্বকে।
লেখা: সাবা সিদ্দিকা সুপ্ত