সাবিত রেজা
সাকিব আল হাসান।বাংলাদেশের এক অপরিহার্য খেলোয়ার।তাকে দলে নেয়া মানে একসাথে ২ জন পাওয়া।তবে সামনের সাউথ আফ্রিকা টেষ্ট সিরিজে তিনি দলে নেই।নিজ থেকেই তিনি বিসিবির কাছে ছুটি চেয়েছিলেন।
মার্কাস ট্রেসকোথিক এর কথা আছে?? সম্ভবত ইংল্যান্ডের সব থেকে ফেয়ারলেস আর ডমিনেটেড ওপেনার ছিলো! ৭৬ টেস্টে ৪৪ গড়ে ৫৮০০+ রান,১৪ টা সেঞ্চুরি। ১২৩ ওয়ানডেতে ১২ টা সেঞ্চুরি, প্রায় ৪ হাজার রান,স্ট্রাইকরেট ৮৬ এর কাছাকাছি। সাকিবের এখন ঠিক যে বয়স ট্রেসকোথিক ঠিক সেই বয়সে ফর্মের তুংগে থাকা অবস্থায় ” Stress Related Mental illness” এর জন্য অবসর নিয়ে নিলেন।
জনাথন ট্রট কে ভূলতে পারেননি এখনো নিশ্চয়ই। মাত্র ৫২ টেস্টে ৪০ এর কাছাকাছি এভারেজে প্রায় ৪ হাজার রান,৯ টা সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে ৬৮ ম্যাচে ৫০ এর উপরের এভারেজ।রক সলিড ইংলিশ টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান অবসর নিয়ে নিলেন মানষিক অবসাদ এর জন্য।
মানষিক এবং শারীরিক সমস্যা জনিত কারনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন এমন উদাহরণ আছে ক্রেইগ কিসওয়েটার,নারী কন্ট্রাকটর,ডেভিড লরেন্স,জিওফ এলট সহ আরো অনেকে!
অবশ্য আমাদের মাথায় এগুলা ঢুকবে না। আমাদের দেশে সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে কেউ গেলে আমরা ধরে নেই যে ওর মাথায় গন্ডগোল আছে।মানষিক রোগে আক্রান্ত মানুষকে আমরা বলি “পাগল” ।আমাদের কাছে কি আর “মানষিক অবসাদ” নামক কোন শব্দের মুল্য আছে।আমাদের কাছে সাকিবের ৬ মাসের টেস্ট ম্যাচ থেকে বিরতি চাওয়াটাতো বিলাসিতাই মনে হবে।
কুমার সাংগাকারা বাংলাদেশে জন্মালে আমরা বলতাম যে ওতো টাকাখোর ; ফর্মের সেরা সময়ে থাকা অবস্থায় ও অবসর নিছে টি-২০ খেলে টাকা কামানোর জন্য।শর্টার ফরম্যাটে খেলার জন্য ধোনি টোটাল ফিট থাকা অবস্থায় টেস্ট থেকে অবসর নিছে,আমাদের দেশে এমন হলে আমরা সম্ভবত থাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে দিতাম।
একজন ক্রিকেট প্লেয়ারকে কি মেশিন মনে হয়?যেটা আপনি কিনে ফেলেছেন আর আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনি অন করবেন আর অফ অফ করবেন?
অভিষেকের পরের থেকে টপ লেভেলের ক্রিকেট খেলা আন্তর্জাতিক প্লেয়ারদের মধ্যে সাকিব ছিলো অন্যতম ব্যস্ত।অলরাউন্ডার দের মধ্যে শুধু মাত্র মইন আলী আর এঞ্জেলা ম্যাথিউস তার থেকে বেশি দিন ক্রিকেট ফিল্ডে ছিলো অভিষেকের পর থেকে।আর শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চিন্তা করলে এঞ্জেলা ম্যাথিউস তার থেকে বেশি মাঠে ছিলো ।প্লিজ টি-২০ ফ্রাঞ্চাইজি গুলোর ধকলের কথা বলবেন না।প্রথম কথা হলো একজন মানুষের কাছে টাকা কখনো “irrelevant” হতে পারে না, আর দ্বিতীয় কথা হলো ১০ টা টি-২০ খেলে যে ধকল যায় দেহের উপর একটা টেস্টে তার থেকে অনেক বেশি ধকল যায়।আশংকা করেছিলাম কোন অন্তঃকলহ এর জন্য সাকিবের এর এমন সিদ্ধান্ত।যদি এমন নাও হয় আমাদের কি উচিৎ নয় সাকিবের নিজেকে নিয়ে সিদ্ধান্তে আমাদের সম্মান রাখা? বোর্ড তো সোনার ডিম পাড়া তালহা জুবায়েরের যত্ন নিতে পারেনি,মাশরাফির ক্যারিয়ারে অর্ধেকটা নষ্ট করে ফেলেছে, বোর্ডের খেলোয়াড়দের প্রতি যত্নের অনীহার তালিকা করতে গেলে কেবল দীর্ঘশ্বাসই বাড়বে।সাকিব থাকুক না সাকিবের মত করে।সাকিব যদি মনে করে এই কিছুদিনের বিরতি ওর ক্যারিয়ারটাকে সামনে আগায়ে নিতে সাহায্য করবে তাহলে আমরা সেই সিদ্ধান্তকেই স্বাগত জানাই।