আগামী ডেস্কঃ
বাংলা চলচিত্রের প্রবাদ পুরুষ জহির রায়হানের আজ জন্মদিন। ১৯৩৫ সনে আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৯ আগস্ট ফেনি জেলার মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার চাকুরীর সুবাদে শৈশবের পুরোটা সময়ই কেটেছে কোলকাতাতে। ১৯৪৭ এ দেশ ভাগ হলে ঢাকা ফিরে আসেন তাঁদের পুরো পরিবার।
১৯৫৮ সনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স পাশ করেন। ছোটবেলা থেকেই জহির রায়হান লেখালিখির সাথে জড়িত ছিলেন। ছাত্রাবস্থায় ১৯৫০ সনে সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি বেশ কয়েকটি পত্রিকাতে সাংবাদিক এবং সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ যুগের আলো, খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা, প্রবাহ(সম্পাদক) ইত্যাদি। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ “সূর্যগ্রহণ” প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সনে। আবহমান গ্রামীণ জীবনের চিত্র নিয়ে লেখা “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসটি জহির রায়হানের সেরা গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সাহিত্যকর্মকে আরও বিস্তৃতভাবে এগিয়ে নিতে ১৯৫৭তে তিনি চলচিত্রকার হিসেবে নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করেন
জহির রায়হানের প্রথম চলচিত্র “জাগো হুয়া সাবেরা”। যেখানে তিনি সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬১তে প্রধান পরিচালক হিসেবে মুক্তি পায় “কখনো আসেনি”। এরপর তিনি নির্মাণ করেন পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচিত্র “সঙ্গম”।
ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালিখির পাশাপাশি জহির রায়হান রাজনীতিতেও প্রবলভাবে জড়িত ছিলেন এবং বহুবার কারাবরণ করেছেন। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন পরিচিত মুখ। ২১শে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক আমতলা সমাবেশে তিনি উপস্থিত ছিলেন এবং কারাবরণ করেন। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তাঁর নির্মিত “জীবন থেকে নেওয়া” চলচিত্রটি ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে এবং সেই সাথে তিনি পাকিস্তান সরকারের রোষানলের মুখে পড়েন।
এরপর ৬৯’ এর গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন। ৭১’ এর মুক্তিযুদ্ধেও তিনি নিজের ছাপ রাখেন। যুদ্ধ শুরু হলে তিনি কোলকাতা চলে যান। সেখানে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি ঐক্যমত গড়ে তুলতে থাকেন এবং নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধের ওপর ডকুমেন্ট্রি “স্টপ জেনোসাইড”। কোলকাতার বিভিন্ন থিয়েটারে চলে তাঁর ডকুমেন্ট্রি ও জীবন থেকে নেওয়া চলচিত্রটি। প্রবল আর্থিক দৈন্যদশা চলা সত্বেও চলচিত্র প্রদর্শনী থেকে অর্জিত টাকার পুরোটাই তিনি তুলে দেন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে।
দেশ স্বাধীন হলে ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এ তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং তার ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খোঁজা আরম্ভ করেন। যাঁকে আল বদরের সহযোগীতায় পাক মিলিটারিরা ধরে নিয়ে গুম করে ফেলেছিল। ১৯৭২ সনের জানুয়ারির ৩০ তারিখে ভাইকে খুঁজতে জহির রায়হান মিরপুর যান এবং সেখান থেকে তিনি আর ফিরে আসেন নি। স্বাধীনতার বহুবছর পর বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারা যায় মিরপুর বিহারি পল্লীতে ছদ্মবেশী পাক মিলিটারিরা বাঙালির ওপর গুলি চালালে সেখানেই নিহত হন বাংলা চলচিত্রের বরপুত্র জহির রায়হান।
ব্যক্তিগত জীবনে জহির রায়হান দুইবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬১ সনে সুমিতা দেবীকে এবং ১৯৬৮ সনে সুচন্দাকে বিবাহ করেন। সুমিতা দেবীর ঘরে দুই সন্তান অনল রায়হান ও বিপুল রায়হান। সুচন্দার ঘরে তপু রায়হান। তারা প্রত্যকেই প্রতিষ্ঠিত নাট্যাভিনেতা