রাশিয়া ঘোষণা দিয়েছে, তারা আর স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন না করার পূর্বের একতরফা সিদ্ধান্ত মেনে চলবে না। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্তকে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং এর জন্য ন্যাটোর আগ্রাসী রুশ-বিরোধী নীতিকে সরাসরি দায়ী করেছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, “এই সিদ্ধান্ত ন্যাটো দেশগুলোর রুশ-বিরোধী অবস্থানের প্রত্যক্ষ প্রতিক্রিয়া। এটি একটি নতুন বাস্তবতা, যা আমাদের প্রতিপক্ষদের মেনে নিতে হবে। আরও পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকুন।”
তবে “আরও পদক্ষেপ” বলতে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন, সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কিছু জানাননি।
এই হুঁশিয়ারির পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার পারমাণবিক উত্তেজনা। গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, তারা ‘উপযুক্ত অঞ্চলগুলোতে’ দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করেছে রাশিয়ার সামরিক তৎপরতার জবাবে। এরপর থেকেই রুশ কূটনীতিক ও সামরিক নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “ইউরোপ এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত নীতি পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলগুলোতে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করছে। তাই আমাদের পূর্বঘোষিত একতরফা স্থগিতাদেশ বজায় রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।”
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সামরিক তৎপরতা অব্যাহত থাকে, তবে রাশিয়াও তাদের প্রতিরক্ষা নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লাভরভ বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বারবার রাশিয়া ও চীনের সতর্কতা উপেক্ষা করেছে। তারা এখন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে অস্ত্র মোতায়েন শুরু করে দিয়েছে। এর ফলে রাশিয়ার স্থগিত সিদ্ধান্ত কার্যত অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।”
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় আইএনএফ চুক্তি। এই ঐতিহাসিক চুক্তির ফলে ইউরোপে ভূমিভিত্তিক মধ্যম পাল্লার পারমাণবিক ও প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এটি সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং ঠান্ডা যুদ্ধ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে। রাশিয়া তখন পাল্টা জানায়, যুক্তরাষ্ট্র আগে অস্ত্র মোতায়েন না করলে রাশিয়াও করবে না।
কিন্তু বর্তমানে উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে মস্কো। ফলে ইউরোপ এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতার নতুন এক অধ্যায় শুরুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।