আমার সন্তানেরা শুধু চামড়া ও হাড় হয়ে গেছে। আমরা আর টিকতে পারছি না”—এভাবেই বেঁচে থাকার করুণ আকুতি জানিয়েছেন গাজার মাঘাজি শরণার্থী ক্যাম্পের ৩৮ বছর বয়সী মা জামিল মুগারি। তিনি বলেন, “আমার মেয়ের বয়স পাঁচ বছর, ওজন মাত্র ১১ কেজি। আগে নিজে ৮৫ কেজি ছিলাম, এখন ৫৫-তে নেমে এসেছে। আমরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছি; বিশ্ব বিবেক আমাদের বাঁচাক।”
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জামিল জানান, প্রতিদিন এক বেলা ডাল খেয়েই দিন কাটাতে হয়। ক্ষুধায় কাঁপুনি ধরে, রাস্তায় হাঁটলে মাথা ঘোরে, প্রায়ই মাটিতে পড়ে যান।
ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিনই বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যা। শনিবার একদিনেই নিহত হয়েছেন ৩০ জন, যার মধ্যে ১৩ জন ছিলেন ত্রাণপ্রার্থী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬৯ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ৯৩ জন শিশু। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রাণ হারিয়েছেন ৬০ হাজার ৪৩০ জন, আহত হয়েছেন এক লাখ ৪৮ হাজার ৭২২ জন।
জাতিসংঘ জানায়, গাজায় বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ত্রাণপ্রত্যাশীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৩৮০।
গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের চারটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র দিনে মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য খোলা থাকে, যেখানে প্রাণ হাতে নিয়ে খাদ্যের জন্য ভিড় জমায় ক্ষুধার্ত মানুষ। ওই কেন্দ্রেই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন অনেকে।
দেইর আল-বালাহর বাসিন্দা আবু আল-আবেদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে কেউ ভাবে না—না আরব, না অনারব।”
উত্তর গাজার জরুরি ও অ্যাম্বুলেন্স প্রধান ফারেস আফানাহ আলজাজিরা-কে বলেন, “আমাদের ৮০ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়ে গেছে, চিকিৎসা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত।”
বিমান থেকে খাবার ছুড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক ফিলিস্তিনি। রানা আত্তিয়া বলেন, “বিমান থেকে খাবার ফেলার পর যেভাবে ছুটে যাই, মনে হয় যেন হাড়ের পেছনে দৌড়ানো কুকুর। এটি আমাদের জন্য অপমানজনক।