হাসান ইনাম
আমি রক্তমাংসে গড়া একজন মানুষ স্যার। রোবটের মতো কার্যক্ষমতা বা চিন্তাশক্তি নেই আমার। কোন কাজ করার আগে আমাকে চিন্তা করতে হয়। চিন্তার করার জন্য আমার সময় প্রয়োজন হয়। আমার মস্তিষ্ক এত চাপ নিতে পারে না স্যার। সৃজনশীল পদ্ধতি অনেক উপকার করেছে আমাদের স্যার। এখন আর মুখস্থ বিদ্যায় চলতে হয় না আমাদের। নোট গাইড থেকে প্রশ্ন উত্তর মুখস্থ করে হলে ঢোকা লাগে এখন। টেক্সট বই পড়েই আমরা পরীক্ষা দেই। আগে যেমন না বুঝেই গলাধঃকরণ করে পরীক্ষার হলে গিয়ে উগলে দিতাম এখন আর তেমন করতে হয় না। বুঝেশুনে মূল মুখ্য বিষয়টাই মাথায় ঢুকিয়ে নেই আমরা। তারপর নিজের জ্ঞান অনুযায়ী লিখে থাকি। আপনাকে ধন্যবাদ স্যার। শিক্ষাক্রমে নতুনত্ব এনেছেন আপনি। স্যার মুদ্রার ওপিঠের কথা শুনবেন ?
একটা সৃজনশীল লিখতে আমাদের হাতে সময় থাকছে ২১ মিনিট করে। সেই ২১ মিনিটে চারটে প্রশ্নের উত্তর লিখতে হচ্ছে। ‘ক’ নম্বর আর ‘খ’ নম্বরের জন্য না হয় তেমন সময় নিলাম না। ‘গ’ আর ‘ঘ’ লিখতে কি এই সময় যথেষ্ট? যথেষ্ট হতে পারে স্যার। তবে আমার পক্ষে সম্ভব না স্যার। সৃজনশীল মেধা খাটানোর জন্য আমার সময়ের প্রয়োজন। হাতের লেখা সুন্দরের জন্য সময়ের প্রয়োজন। আমি খাতায় মার্জিন টানি। সাক্ষরলিপিতে সাক্ষর দেই। আমি পরিপূর্ণ ২১ মিনিট পাই না স্যার। উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ টেক্সট বইয়ের লেখা খুঁজতে আমার সময় লাগে স্যার। আমার মাথায় গুগলে মতো সার্চ ইঞ্জিন নেই স্যার।
সবথেকে দুঃখের কথা কী জানেন স্যার? এত কষ্ট করে এত এত পৃষ্ঠা ভরিয়ে লেখার পরেও নম্বর দেওয়া হয় না আমাদের। আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দদের ঠিকমতো সৃজনশীল উত্তরপত্র দেখার জন্য ট্রেনিং দেওয়া হয়। সেই ট্রেনিং এ সবাই সুযোগ পায় না। যারা সুযোগ পান তারা কতটুকু প্রয়োগ করেন খাতা দেখার সময় সেটাও জানিনা স্যার। শিক্ষকদের মনোরঞ্জনের জন্য আমাদের সেই গাইড বইয়ের কাছে মাথানত করতে হয়। হুবহু গাইডের মতো না লিখলে অনেকে নম্বর দিতে চান না। অনেকে আবার এ্যাভারেজে একই নম্বর দিয়ে যান সবাইকে। এতেকরে ভালো করেও লিখলেও তেমন লাভ হয় না আমাদের। অনেক শিক্ষক আমাদের নম্বর দেন পৃষ্ঠা গুনে গুনে। মূল কথা যখন অল্প কথায় লিখে নম্বর পাই ২ আর ঘুরিয়ে পেচিয়ে এক কথা বারবার বলে পৃষ্ঠা ভরিয়ে নম্বর পাই ৮ তখন আমাদের সৃজনশীলতার স্বার্থকথা বুঝে আসে। ৭ টা সৃজনশীল না লেখার প্রতিবাদে যেসব কথা হচ্ছে সেসব কথা নিশ্চয়ই একটু হলেও পৌঁছেছে। শুধু পৌঁছেনি সেই তিন আঙুলের আর্তচিত্কার যে তিন আঙুল দিয়ে আমি কলম ধরি। একটু কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন স্যার। বিশ্বাস করুন আমি রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আমি রোবট নই।