ফেনীতে টানা বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সর্বোচ্চ ৪০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস, যা চলতি মৌসুমে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং জেলারও সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে শহরের বেশির ভাগ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে ডাক্তারপাড়া, শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়ক, পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস এলাকা, রামপুর, পাঠানবাড়ি, একাডেমি, নাজির রোড, হাসপাতাল মোড় ও পেট্রোবাংলাসহ নানা এলাকায় কোমর থেকে হাঁটুসমান পানিতে চলাচল করতে হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।
শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকে গেছে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে অনেকের। অনেকেই পরিবারসহ অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। জলাবদ্ধতার কারণে ফেনীর একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষাও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ:
শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুরবস্থার জন্য তারা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন। স্থানীয়দের ভাষ্য, শহরের বেশির ভাগ খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট ও স্থাপনা। পিটিআই খাল, খাজা আহমদ লেক, পাগলিরছড়া খালসহ গুরুত্বপূর্ণ পানি নিষ্কাশন পথগুলো দখল হয়ে থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। ড্রেনগুলো খালে সংযুক্ত না থাকায় পানি আটকে থাকে সড়ক ও বাড়িঘরে।
একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও দখলকারীরা পুনরায় অবকাঠামো নির্মাণ করে। তাই তারা স্থায়ীভাবে খালগুলো দখলমুক্ত করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও প্রভাব:
শহরের ডানহাম গলির বাসিন্দা রওশন আরা বলেন, ‘‘নিচতলার ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে, সব জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছি।’’
দাগনভূঞা একাডেমির শিক্ষক গাজী ছালাহ উদ্দিন জানান, স্কুলমাঠে পানি জমে যাওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রশাসনের অবস্থান:
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, ৭ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে ৮ জুলাই দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানিয়েছেন, মুহুরী নদীর পানি এখনো বিপদসীমার নিচে রয়েছে, তবে উজানে বৃষ্টিপাত বাড়লে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। ভাঙন রোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পাউবো।
পৌরসভার বক্তব্য:
ফেনী পৌর প্রশাসক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন, ‘‘ড্রেনেজ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে এ জলাবদ্ধতা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও পুনরায় নির্মাণ করা হয়। দ্রুত আবারো অভিযান চালানো হবে। ৮টি দল পানি সরাতে কাজ করছে এবং নিজেও মাঠে রয়েছি।’’
জেলা অন্যান্য এলাকার পরিস্থিতি:
ফুলগাজীর শ্রীপুর রোডে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে পড়েছে কিছু দোকান। দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা ও নদীভাঙনের খবর পাওয়া গেছে।
শহরবাসীর দাবি, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও দখলমুক্ত খাল ছাড়া ফেনীর জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তাদের আশা, কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।