রাগ করে বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিলাম, এখন আছি যুক্তরাজ্যে: মনিকা দাসের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন (এইউডব্লিউ)–এর শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে জীবন বদলে গেছে মনিকা দাসের। চট্টগ্রামের এই আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়া শুধুমাত্র মনিকার নয়, অনেক সুবিধাবঞ্চিত নারীর স্বপ্ন পূরণের মঞ্চ হয়েছে। তেমনই এক অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী মনিকার, যিনি হাজারো বাধা পেরিয়ে আজ যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে থিতু হয়েছেন।
উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত জীবনের দিনগুলো শান্ত ছিল। বাবা পাসপোর্ট অফিসে চাকরি করতেন, মা গৃহিণী, আর তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র মেয়ে। ২০১৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেলেও মনিকা পড়তে চান অর্থনীতিতে। পরের বছর চান্স না পাওয়ায় তিনি রাজশাহী কলেজের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন, কিন্তু মনটাকে স্থির রাখতে পারেননি।
সেই সময় পরিবারে বড় ধাক্কা আসে, বাবা স্ট্রোক করে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন এবং ২০১৬ সালে মারা যান। বড় ভাইয়ের বিয়ে ও ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার পর পুরো পরিবারের ভার কাঁধে নিতে হয় মনিকাকে। বাড়ির মানুষ বিয়ে দিতে চাইলেও স্নাতক শেষ না করা পর্যন্ত তিনি রাজি হননি। এক পর্যায়ে মনিকা রাগ করে বাড়ি ছেড়ে যান।
ঢাকায় এসে গার্মেন্টসে কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন মনিকা। পরিবারের কেউ কখনো গার্মেন্টসে কাজ করেননি, তাই এই নতুন অভিজ্ঞতা ছিল দুঃসহ সংগ্রামের। ১০ দিন পর সৌভাগ্যক্রমে তিনি এইউডব্লিউ’র শিক্ষাবৃত্তির খবর পান এবং ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি হন।
ক্যাম্পাসের ডর্মে থেকে পড়াশোনা, মাসিক বৃত্তি, টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজ—সব মিলিয়ে শিক্ষাজীবন অনেক ভালো কাটে। প্রকল্পভিত্তিক কাজের সুযোগও পান, যেমন কর্ণফুলী ইপিজেডের কারখানায় নারী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া।
স্নাতক শেষে মনিকা বিয়ে করেন এবং দেশের বাইরে পড়াশোনার স্বপ্ন পূরণের তাড়নায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা খোঁজেন। ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামে ৫০% বৃত্তি পেলেও বাকি খরচ বহন অসম্ভব মনে হয়। পরে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ওয়েলসে আবেদন করেন, যেখানে ৩ হাজার পাউন্ড বৃত্তি পেয়ে ভর্তি হন।
বিদেশে পড়ার জন্য প্রথম অর্থনৈতিক সহায়তা পান মার্কিন ব্যবসায়ী স্যাম গিলানি থেকে। সঙ্গে ছিলেন শ্বশুরবাড়ির পরিবার, ভাই ও শিক্ষকরা। বর্তমানে মনিকা ও তাঁর স্বামী যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে থাকেন। তিনি ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে মাস্টার্স করেছেন এবং এখন একটি হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিতে চাকরি করছেন।
পেছনে ফিরে তাকালে মনিকা মনে করেন, জীবনের কঠিন সিদ্ধান্তগুলোই তাকে শক্তিশালী করেছে। “বাড়ি ছেড়ে যাওয়া ছিল রাগের প্রভাবে, কিন্তু আজ আমি আমার স্বপ্নের জীবন যাপন করছি,” বলছেন তিনি।