হাসান ইনাম
সন্তান! সন্তান আপনাদের কাছে অমূল্য রতন। নবজাতক শিশু থেকে ধীরে ধীরে কোলে-কাঁখে করে বড় করেছেন সন্তানকে। কখনও অভাব বুঝতে দেননি। সাধ্যমত আবদার পূরণ করেছেন। আদর আর ভালোবাসা দিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। আপনাদেরই সন্তান। আপনাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। পড়ালেখা করিয়েছেন। আলাদা প্রাইভেট-কোচিং। সংসারে টানাটানি চললেও নিয়ম করে চুকিয়েছেন সন্তানের টিউশন ফি। কোনও কিছুর কমতি রাখেননি। সেই সন্তান যখন কোনও পাবলিক এক্সামে অংশগ্রহণ করে তখন স্বভাবতই আপনি বাড়তি কিছু আশা করেন। অন্যদের তুলনায় আপনার সন্তান ভালো করবে। আপনার মুখ উজ্জ্বল করবে। এটা অমূলক নয়। এই চাওয়া আপনার অধিকার। আপনার সন্তান, আপনার অধিকার।
কিন্তু এই বাড়তি চাওয়াটা কী ঠিক? আপনার পাশের ডেস্কের জলিল সাহেবও তো সন্তানের পিছনে কষ্ট করছেন। লাঞ্চে খরচ কমিয়ে মেয়ের বই কিনছে। পাশের ফ্ল্যাটের লাভলি ভাবিও তো গত মাসের মার্কেট বাদ দিয়েছেন ছেলের জন্য। আপনার মতো কষ্ট তো তাঁরাও করছে। সবাই করছে। কেউ আপনার থেকেও বেশি করছে। তারাও সন্তানের দিকে তাকিয়ে বাড়তি স্বপ্ন দেখছে। আপনিও দেখছেন। সবাই যখন এগিয়ে যেতে চাচ্ছে। কেউ কেউ তো পিছিয়ে পড়বেই। পড়তেই হবে। নাকি?
সময়টা এখন প্রতিযোগিতার। পার্সোনাল লাইফ বলেন আর কর্পোরেট লাইফ বলেন। সবখানেই সবাই চাচ্ছে একজন আরেকজনের থেকে এগিয়ে যেতে। এক বিন্দু হলেও এগিয়ে থাকতে। এই সমস্যা আপনার একার না। সমস্যা সমাজের, রাষ্ট্রের। তাহলে আপনার কী করণীয় এখন? সন্তানকে আর চাপ দিবেন না? পড়তে বসতে বাধ্য করবেন না?
করবেন। সব করবেন। জাস্ট আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নটা বাদ দিবেন। আপনার সন্তান ভালো করবে এরকম একটা বিশ্বাস পুষে রাখেন। বারান্দার টবে আত্মবিশ্বাসের চারা বুনন করেন। তারপর পরিচর্যা করতে থাকেন। অপেক্ষায় থাকুন ফুল ফোটার। সুগন্ধি একটি ফুল। ভালো ফুল। কিন্তু এই ফুলটিই বিশ্বের এক নম্বর ফুল হবে এমন স্বপ্ন দেখা বাদ দিন।
আপনার ভাই ব্যাংকক থেকে নেকলেস পাঠিয়েছে। শ্বশুর বাড়ী থেকে দুই বিঘা জমি পেয়েছেন। এসব শো অফ করেন। সমস্যা নেই। কিন্তু আপনার সন্তান অমুক কলেজে পড়ে এগুলো বলে শো অফ করার দরকার নেই। কলেজ হয়তো ফ্যাক্ট। কিন্তু সময় তো এখন প্রতিযোগিতার। আপনি খুব গর্ব করে বন্ধুর সামনে বললেন আপনার সন্তানের কলেজের কথা। আপনার বন্ধু মুচকি হেসে চলে গেলো। এই মুচকি হাসির মানে কী জানেন? আপনার বন্ধুর সন্তান ভালো কলেজে চান্স পায়নি। আজ বাসায় গিয়ে সন্তানকে নিকুচি করে বলবে ‘তোকে দিয়ে কিসসু হবে না’। তারপর ছেলেটা বা মেয়েটা ভাবতে থাকবে আসলেই তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। ভিতরে ভিতরে মরে যাবে। মৃতদেহ নিয়ে ঘুরতে থাকবে। এই ঠান্ডা মাথার খুনি কিন্তু আপনি। তাই একটু ভেবে চিন্তে।
লেখকঃ শিক্ষার্থী,
দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদরাসা