–সাবা সিদ্দিকা সুপ্ত
খুবই বিশেষ একজন মারা গেছে।
জানতে চান,কে?
তবে বলছি।
বলার আগে কিছু প্রশ্ন শুনুন।
ওই যে সেদিনই তো হেঁটে রাস্তা পার হচ্ছিলেন। পাঁচ মিনিট আগেই যে বাচ্চাটাকে মায়ের হাত ধরে হেলতে দুলতে রাস্তা পেরুতে দেখছিলেন, পাঁচ মিনিট পর তো তারই আঠালো কালচে লাল রক্তে কাঁচা পিচ পথটা মাখামাখি হয়েছিল। তার চাক্ষুষ সাক্ষী আপনি। আর কি বলেছিলেন মনে আছে!? “বাচ্চাটা বোধ হয় আর নেই”। আরে,আজব তো! হেল্প করার মুরদ নেই তা জানি, কিন্তু মুখ থেকে একটা পজেটিভ কথা বের করতে কি খুব বেশিই টাকা লাগে!? খোঁজ নিয়েছিলেন কি, বাচ্চাটা আসলে বেঁচে আছে কিনা। অন্তত আপনার নেগেটিভ ভবিষ্যৎ বাণী পরীক্ষা করতেও কি ওর খোঁজ নেননি?
তাড়াহুড়ো কিসের এতো। জানবেন তো কে মারা গেছে। এতটুকুও ধৈর্য কি নেই!
মাসখানেক আগে তো আপনিই হাইওয়েতে ছ পাঁচেক মানুষকে রক্তে লুটোপুটি খেতে দেখছিলেন। মজা লাগছিল খুব ? ট্রাকের ধাক্কায় ভ্যান থেকে পড়ে যাওয়া লোকগুলোর ট্রিটমেন্টের জন্যে একটা সিএনজি ঠিক করাটাও কি আপনার কর্তব্য ছিল না! লাল দেহগুলোর যখন আলোকচিত্র গ্রহণ করা হচ্ছিল তখন তো খুব মজা নিচ্ছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা টিনএজ মেয়েটা যখন ছবি তোলার প্রতিবাদ করছিল, তখন কি তার কাছ থেকে মানবতার ছোট্ট একটা শিক্ষা নিতে পারেন নি!
সারাদিনই তো এই বন্ধু ওই বন্ধুর করে টাকা ওড়ান। কোথায় ছিল তখন আপনার দেউলিয়া হৃদয়! ময়মনসিং এর অজপাড়া গাঁয়ের এক মেধাবি ছাত্রী যে প্রতি মুহূর্ত লড়াই করছে মরণঘাতো ক্যান্সারের সাথে, তার ট্রিটমেন্টের জন্যে সাহায্য চাওয়া বন্ধুদের অপমান করে কলেজ গেট থেকে বের করে দিয়েছিলেন। ভালই হল, আপনার মতো ছোট মনের মানুষদের ঘৃণিত দয়া থেকে মেয়েটি বেঁচে গেল।
তবে আমি মনে করিনা সেই বিশেষ কারোর মৃত্যুর সংবাদ আপনার মনে বিন্দু মাত্রও দাগ কাঁটবে। কেননা মৃত্যু হয়েছে আপনার মানবিকতার। চাক্ষুষ মৃত্যুর প্রতি যাদের দরদ নেই, নিরাশা নেই; তারা কোন অনুভুতিরই তোয়াক্কা করে না। সে আপনার প্রিয়জন হোক, কিংবা অন্তরাত্মা।