রাজবাড়ী জেলার কালুখালীতে গার্মেন্টস শ্রমিক নাজমা বেগম মঞ্জু (৪২) হত্যায় সাবেক স্বামী মকিম মোল্লাকে (৪৫) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। আসামি মকিম মোল্লা ভিকটিম নাজমার দ্বিতীয় স্বামী ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিনিয়র দায়রা জজ জয়নাল আবেদীন এ রায়ের আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি মকিম মোল্লা পলাতক ছিলেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত মকিম মোল্লা এ উপজেলার চরকুলটিয়া গ্রামের আজিজ মোল্লার ছেলে।
মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় স্বামী মকিম মোল্লার কাছ থেকে জমি বন্ধক নেওয়ার কথা বলে দেড় লাখ টাকা নিয়েছিলেন নাজমা। সেই টাকা পরিশোধ না করেই মকিমকে ডিভোর্স দেন তিনি।
এরপর থেকে নাজমা গাজীপুরে পোশাক কারখানায় চাকরি শুরু করেন। মকিমও আরেক স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরে পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। নাজমা খাতুন ছুটিতে গ্রামে বাবার বাড়িতে আসেন।
২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার দিকে মৌরাট ইউনিয়নের বাগদুলের বড় বোন রেহেনার বাড়িতে পাওনা টাকা আনতে যান নাজমা। সেখান থেকে ফেরার সময় মকিম মোল্লার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ হয় তার।
পরে কালুখালীর সোনাপুর মোড়ে দুজনের দেখা হয়। গল্প করতে করতে নাজমাকে নির্জন স্থানে নিয়ে যান মকিম। একপর্যায়ে তাকে পেছন থেকে ঘাড়ের ওপর চাকু দিয়ে আঘাত করেন তিনি। এতে মাটিতে পড়ে যান নাজমা।
এরপর মাটিতে ফেলে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেন মকিম। পরে তিনি গাজীপুরে চলে যান। পর দিন ২২ ফেব্রুয়ারি সকালে নাজমার লাশ উদ্ধার করা হয়। দ্বিতীয় স্বামীর কাছ থেকে প্রথম স্বামীর কাছে যাওয়ায় ক্ষোভে মকিম তাকে হত্যা করেন।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নাজমার ভাই ইমান আলী মণ্ডল বাদী হয়ে কালুখালী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ মামলার তদন্তে নেমে নাজমার মুঠোফোনের কললিস্ট ঘেঁটে গাজীপুর থেকে সাবেক স্বামী মকিমকে ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করে পুলিশ।
রাজবাড়ী আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আসামি মকিম মোল্লা ভিকটিম নাজমার দ্বিতীয় স্বামী ছিলেন। আদালতে আসামি মকিম মোল্লার দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে। দীর্ঘ শুনানি শেষে আসামি মকিমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি মকিম পলাতক ছিলেন। এ আদেশে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট।