‘আমি বেঁচে থাকার কোনো রাস্তা খুঁজে পাচ্ছি না। আমার সব দিকে অন্ধকার নেমে আসছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো। আমার মৃত্যুর জন্য আমার নির্মম দুর্ভাগ্যই দায়ী।’ জেসমিন আক্তারের কর্মস্থলে তার ব্যবহূত ড্রয়ার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ছোট্ট এই চিরকুট উদ্ধার করেছে পুলিশ। চিরকুট লিখে নিচে নিজের নাম ও তারিখ লিখে রেখেছিলেন তিনি। এটি লেখার তারিখ ৩০ এপ্রিল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন জেসমিন। গত সোমবার রাজধানীর পাইকপাড়ার সরকারি কোয়ার্টার থেকে দুই শিশু সন্তানসহ তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ফুটফুটে শিশু দুটির নাম হাসিবা তাসনিম হিমি (৮) ও আদিবা তাহসিন হানি (৫)। এ ঘটনার পর থেকে জেসমিনের স্বজনের কারও কারও এবং পুলিশের প্রাথমিক ধারণা ছিল- দুই সন্তানকে হত্যার পর আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
দারুসসালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান বলেন, জেসমিনের কর্মস্থলের একটি ড্রয়ার ভেঙে সেটির ভেতরে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। তার সহকর্মীরা সেটি দেখে নিশ্চিত করেছেন চিরকুটের লেখার সঙ্গে জেসমিনের হাতের লেখার মিল রয়েছে। এরপরও বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
এদিকে এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। স্বজনরা মামলা না করায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়েছে। তবে জেসমিনের স্বজনদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছে পুলিশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত সন্দেহ করার মতো কোনো ক্লু পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান এএম সেলিম রেজা মন্তব্য করেছিলেন, আঘাতের ধরনগুলো তার কাছে ‘ব্যতিক্রমধর্মী ‘ মনে হয়েছে।
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে জড়িত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নিহত তিনজনের গলা কাটা ছিল। জেসমিনের গলার পাশাপাশি দুই হাতের কবজির কাছে কাটা ছিল। বুকে ছিল কমপক্ষে ১২টি আঘাতের চিহ্ন। বড় মেয়ে হিমির পেটে তিনটি আঘাতের চিহ্ন। তার বাম হাতের কবজি কাটা ছিল। ছোট মেয়ে হানির পেটে একটি এবং ডান হাতের কবজির কাছে কাটা ছিল। জেসমিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এত কাটার দাগ থাকায় প্রশ্ন উঠেছিল- আত্মহননের পথ বেছে নিলে কীভাবে শরীরে এত আঘাতের চিহ্ন থাকে! আবার ঘটনার সময় বাসায় অন্য বাসিন্দারা থাকলেও কেন তারা বিষয়টি সামান্য আঁচ করতে পারেননি।
তবে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য- মানসিকভাবে চরম ভারসাম্যহীন হয়ে পড়লে ধারালো ছুরি দিয়ে নিজের শরীরের নানা জায়গায় এলোপাতাড়ি আঘাত করা সম্ভব। চিরকুট পাওয়ার পর এ ধারণা আরও জোরালো হয়েছে।
নিহতদের স্বজনরা জানান, যে কক্ষ থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সেটি ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। ভেতরে উচ্চৈঃস্বরে টেলিভিশনও চলছিল। এ ছাড়া ফ্যানও চালানো অবস্থায় ছিল। তাই হয়ত ভেতর থেকে সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি।
জেসমিনের খালাত বোন রেহানা পারভীন জানান, জেসমিন অনেক দিন ধরে মানসিক সমস্যা ও মাইগ্রেনের ব্যথায় ভুগছেন, এটা পরিবারের সবাই জানতেন। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সারাক্ষণ তিনি দুশ্চিন্তা করতেন। দেশ-বিদেশে তিনি চিকিৎসাও নিয়েছেন। তাছাড়া জেসমিন ও তার স্বামী জাতীয় সংসদের অ্যাসিস্ট্যান্ট লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান হাসিবুল ইসলামের মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে চরম বিরোধের কথা তার জানা নেই।